অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। ড. ইউনূস একজন বিখ্যাত বাংলাদেশী ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন প্রাক্তন শিক্ষক এবং ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত। অধ্যাপক ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, যা তাকে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার এনে দেয়। ড. ইউনূস বর্তমানে জাতিসংঘ ফাউন্ডেশন বোর্ডের একজন সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন:

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৮ জুন ১৯৪০ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১৬তম স্থান অধিকার করেন এবং চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে বিএ ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন:

১৯৬২ সালে মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। দেশে ফিরে ১৯৭২ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৭৫ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। তিনি ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া, তিনি গ্লোবাল কমিশন অফ উইমেন হেলথ, সাসটেইনেবল ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের উপদেষ্টা পরিষদ এবং ইউএন এক্সপার্ট গ্রুপ অন উইমেন অ্যান্ড ফাইন্যান্সে কাজ করেছেন।

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অবদান:

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদানে সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় তিনি দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেন এবং গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্প চালু করেন। একই বছর তিনি তেভাগা খামার প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে সরকার প্যাকেজ প্রোগ্রামের আওতায় অধিগ্রহণ করে।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা:

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৬ সালে গরিব বাংলাদেশীদের মধ্যে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যাংকটি ৫.৩ মিলিয়ন ঋণগ্রহীতার মধ্যে ৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করেছে। ঋণের টাকা ফেরত নিশ্চিত করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক “সংহতি দল” পদ্ধতি ব্যবহার করে। ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক একটি বৈধ এবং স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে।

উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ:

  • Banker to the Poor: Micro-lending and The Battle against World Poverty (১৯৯৮)
  • Three Farmers of Jobra (১৯৭৯)
  • Creating a World Without Poverty (২০০৭)
  • দারিদ্র্যহীন বিশ্বের অভিমুখে (আত্মজীবনী মূলক বই)
  • দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বের জন্য
  • গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন
  • পথের বাধা সরিয়ে নিন, মানুষকে এগুতে দিন

সম্মাননা:

ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬২টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেলও লাভ করেছেন। কানাডা ও জাপানের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ড. ইউনূসের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য পুরস্কার:

  • ১৯৭৮: প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড
  • ১৯৮৪: রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার
  • ১৯৮৫: কেন্দ্রীয় ব্যাংক অ্যাওয়ার্ড
  • ১৯৮৭: স্বাধীনতা পুরস্কার
  • ১৯৮৯: আগা খান অ্যাওয়ার্ড
  • ১৯৯৪: বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র
  • ১৯৯৪: পিফার শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র
  • ১৯৯৭: শান্তি মানব পুরস্কার (ম্যান ফর পিস এওয়ার্ড), ইতালি
  • ১৯৯৮: সিডনি শান্তি পুরস্কার, অস্ট্রেলিয়া
  • ২০০৬: নোবেল শান্তি পুরস্কার
  • ২০০৬: ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট স্বাধীনতা পুরস্কার, নেদারল্যান্ড
  • ২০০৬: সিউল শান্তি পুরস্কার, কোরিয়া
  • ২০০৭: রেড ক্রস স্বর্ণ পদক, স্পেন
  • ২০০৮: ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল এ্যাওয়ার্ড, ক্যালিফোর্নিয়া
  • ২০০৯: প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম, যুক্তরাষ্ট্র